মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের মানুষের উপর বর্বর হত্যাকান্ড চালিয়েছিল। স্থানীয় রাজাকারদের সাথে নিয়ে একের পর এক গ্রামে তারা ঢুকেছে আর সামনে যাকে সন্দেহ হয়েছে তাকেই পাখির মতো গুলি করে মেরেছে। কালের বিবর্তনে অনেক ঘটনা মানুষের মন থেকে মুছে যায়। ইতিহাসের তলানীতে চাপা পড়তে যাওয়া এমন একটি ঘটনা 'জিঞ্জিরা জেনোসাইড' বা 'জিঞ্জিরা গণহত্যা'।
একটি ডোবার ভেতরে মাথা গুঁজে বসে আমি তখন এমন একটি করুণ মৃত্যুর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি যা আমি কোনদিন ভুলে পারবো না। পারি নি। আমি দেখি, শেলের আঘাতে একজন ধাবমান মানুষের দেহ থেকে তার মস্তকটি বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিটকে পড়েছে আমি যে ডোবায় লুকিয়ে ছিলাম সেই ডোবার জলে, কিন্তু ঐ মানুষটি তারপরও দৌড়াচ্ছে। শেলের আঘাতে তার মাথাটি যে দেহ থেকে উড়ে গেছে, সেদিকে তার খেয়ালই নেই। মস্তকছিন্ন দেহটিকে নিয়ে কিছুটা দূরত্ব অতিক্রম করার পর লোকটা আর পারলো না, তার কবন্ধ দেহটা লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। মস্তকহীন দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে ছোটা রক্তস্রোতে ভিজে গেল শুভাড্যার মাটি।
- ১৯৭১ সালের ০২ এপ্রিল তারিখে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঢাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে জিঞ্জিরা অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া মানুষদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ করে।
- কবি নির্মলেন্দু গুণ নিজে সেদিনের সেই ভয়াবহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
- নিজের চোখে যা দেখেছেন তাই তিনি আবেগপ্রবণভাবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি এই ঘটনাকে ভিয়েতনামের মাই লাই গণহত্যার সাথে তুলনা করেছেন।২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশের ঘুমন্ত মানুষদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। সারা দেশে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে যায়। নির্মলেন্দু গুণ অন্যদের মতো গা ঢাকা দেয়ার জন্য ঢাকার জিঞ্জিরা অঞ্চলে গিয়েছিলেন।
বিস্তারিত
0 মন্তব্যসমূহ